১৬.৭.০৮

মোঃ সেলিম রেজা




হারানো বিজ্ঞপ্তি

সুখের খুঁজে কোন হারানো বিজ্ঞপ্তি দেব না;
নিরিবিলি খুঁজে যাবো পথ-ঘাট-মাঠ
প্রান্তর ছেড়ে শহরের প্রতিটি কোনায় কোনায়
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তন্ন তন্ন খুঁজে যাবো
সকাল থেকে মধ্যরাতের প্রহর শেষ অবধি।
ভ্রমরের মতো উড়ে উড়ে খুঁজে নেব চারদিক
কখনো জীবনের খুচরো রোজ নামচার হিসেব মেলাব না;
স্মৃতি আলপনা টাঙিয়ে হেমন্তের নরোম রোদে
ভাবনাগুলো গোছ করে বুক পকেটে রেখে দেবো
সযতেœ রাখা কোমল পরশে চিরকূট
সস্তা দামে নিলাম বাজারে বিকোব না;
কাঙ্খিত ঠিকানায় সুনিশ্চিত ভবিতব্য
দুঃখের আড়াল থেকে বেরিয়ে নিজের আস্তানায়
সুখের ঘরে ঘুমিয়ে গভীর আলিঙ্গনে
স্বপ্নের শাল গায়ে জড়িয়ে।
৯ মে ২০০৭


উড়ক্কু শব্দগুলো


এক টুকরো কাগজে ঝাঁক বেঁধে আসা
পাখিদের মতো উড়– উড়– শব্দগুলো
দিবানিশি খেলা করে কবিতার উঠোনে।
পলকহীন চোখে দাঁড়িয়ে নৈঃশব্দে
সজাগ দৃষ্টির উদাসীন সময়;
স্বাপ্নিক অরণ্যে প্রাকৃতিক অনুষঙ্গ
উড়োজাহাজের আদলে উড়ে এসে
একে একে জড়ো হয় ভাবনার টেবিলে।
কবি আর কবিতা মুখোমুখি; যেতে হবে বহুদূর
জীবন পাখায় ভর করে স্বপ্নের কাছাকাছি।
দিগন্ত প্রসারী শব্দকল্প সারসের মতো উড়ে;
বাস্তবের সাথে বোঝা পড়ায় আশার কথা বলে।
এমনি একদিন অলস দুপুরে দিশেহারা
কলমের আঁচড়ে সাদাসিধে জীবন প্রান্তর
শত সহস্র শব্দে অঙ্কুরিত এক একটি অনুচ্ছেদ।
৬ এপ্রিল ২০০৭

আমি তোমার মতো

আমি সেই প্রেমিক
দেবদাসের মতো একজন;
স্বপ্নের মালা গেঁথে
দাঁড়িয়ে অনন্ত যাত্রায়।

আমি সেই আত্মভোলা
কবির মতো একজন;
আনন্দের গুনগুন শব্দে
প্রেয়সীর প্রেম প্রহরায়।

আমি সেই ভাললাগা
ভালবাসার মতো একজন;
সংসার জীবনের সুখে
ভবিষ্যৎ পথ চলা।

আমি সেই প্রেমিক
তোমার মতো একজন;
প্রতীক্ষায় রাত জেগে
চুপিসারে কথা বলা।

আমি সেই প্রতিবাদী
যোদ্ধার মতো একজন;
জীবনবাজির খেলায়
যুথবদ্ধ বিজয় আলিঙ্গন।

৩০ ডিসেম্বর ২০০৬

জীবনালেখ্য

পাগলা বাতাসের টানে
শুকনো পাতারাও আজ ফিরে পেয়েছে প্রাণ,
বিস্তীর্ণ আকাশে আলো করা রোদ্দুর
দূরে রঙবাহারী প্রজাপতির মেলা
উড়ছে তো উড়ছে, সুতো কাটা ঘুড়ির মতো
সবুজ ধূসর দিগন্তে একটানা পাখির কল-কাকলী
এ যেন রোমান্টিক প্রাকৃতিক আবেগ
নরম আলোর দোলনায় দুলতে দুলতে
মাধুরী মেশানো ছন্দানন্দ হিল্লোল
মাটি রঙের পাহাড়ী পাদদেশে
দাঁড়িয়ে আছি প্রকৃতি প্রেমিক মৃত্তিকা মানুষ।
পলকহীন চোখের দৃষ্টি দিনমান
নিসর্গের সবুজ কালিতে লেখা জীবনালেখ্য।

বিপ্লব

শির দাঁড় সোজা করে দাঁড়াতে চাই;
ন্যুব্জ সময়ে দুঃসহ দুর্দিন
অসম্ভব মিথ্যুকে গিজ গিজ চারপাশ
পিছুটান দিয়েছে উুঁকিঝুঁকি।
ওত পেতে থাকা সেই পুরোনো শকুন
কুঁজো করে দিয়েছে আত্মবিশ্বাস
ডুবে যাওয়া খরস্রোতা নদীর বুকে
ধূলিকণায় ভরা প্রতিটি নিঃশ্বাস।
রক্তাক্ত শরীরে একাকার ঠাঁয় দাঁড়িয়ে
পথের এককোণে শিকড় ছড়িয়ে;
ক্ষত-বিক্ষত হৃৎপিন্ড লাফাতে থাকে
দূরে ঘন অন্ধকারে মনে হয়
মাটিতে শায়িত প্রেতের কঙ্কাল;
বিদগ্ধ আবেগে শিরদাঁড় সোজা করে
উঠে দাঁড়াতে চাই সুদৃঢ় চেতনায়।
পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে মুক্তির উল্লাসে।

মুক্তিযোদ্ধা এবং ......

ক.
একাত্তর’র পরাজিত শত্র“দের আস্ফালন
মর্মাহত করে,
বিপ্লবী করে তোলে রাজাকারদের উত্থান
কালো রাত্রিতে ভেঙ্গেছে স্বপ্ন
দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া বিশ্বাস;
আর আমি সারা রাত জেগে বসে ছিলাম
নিখোঁজ মুক্তিযোদ্ধার পোড়া ভিটেয়।
খ.
ঢেকে রাখা সত্যগুলো আজ
হয়েছে প্রতিপক্ষ,
শ্যামলিমার বুকে পাশবিকতায়
উপচে পড়া রক্তের ফোয়ারা
লাল রক্তে ভেসে যাওয়া ক্ষত-বিক্ষত
শরীর যেন মৃত্যুর গর্জনে ককিয়ে ওঠে
আমি মুক্তিযোদ্ধা .... আমি মুক্তিযোদ্ধা।

১৭ জানুয়ারী ২০০৭

খুলে যায় মনের আগল

আন্ধারের বুকে আমি একা
সাথে বেড়ে চলে রাতের প্রহর,
নেই পাখিদের ইলিমিলি মুখরতা,
শামুকের খোলসের মতো খুলে যায় মনের আগল;
অচেনা মুখ বড্ড চেনা লাগে-
আঁতিপাঁতি খুঁজে চলি স্বপ্ন কয়েক;
উঁই পোকা কুচিকুচি কেটে চলে-
উদোম শরীরে কাম-বাসনা,
আকাশ সম তৃষ্ণার দৈর্ঘ্য
মাতাল আমি নেশাতুর কল্কি টেনে,
চারিদিকে মগ্ধ-দগ্ধ;
নিঃসঙ্গ নিঃসীম এ মানসে-
খুঁজে বেড়াই চুপিচুপি অন্ধকারে
লালিত ললিতার মোহময় তন্।

অষ্টাদশী কিশোরী

জমেছিল অন্তঃপুরে বেদনার কিছু মেঘ
দুঃস্বপ্নের ভেতরে হাঁটে অষ্টাদশী এক কিশোরী।
যার তরতাজা যৌবনের বুকে বিঁধেছে শূল
নিতম্বে সজারুর কাঁটার আঘাত,
স্তনের বোঁটা ছিঁড়েছে বেগানা পুরুষ
জঙ্ঘা বেয়ে যোনি পথে রক্তক্ষরণ।
সম্ভোগের নেশায় চলে সম্ভ্রম হরণের পালা
মধ্যযুগীয় বর্বরতাও হার মানে ভুতুড়ে অন্ধকারে,
হো হো হাসিতে কোমর বেঁধে সাঁতার কাটে
অজানা, অচেনা কিশোরীর সুনসান দীঘিতে।
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার ভেসে আসে কানে
রঙ-বেরঙের মেজাজে নাদান, মুখোশধারী জারজ,
কৃমিকীট, জল্লাদী চেহারার লোলুপ দৃষ্টি,
উল্লাসে মদমত্ত বর্বরেরা হেঁটে চলে বীরদর্পে
সভ্য সমাজের মুখে এক দলা থুথু ছুঁড়ে
ধর্ষিতা কিশোরী দহন জ্বালায় ক্লান্ত পায়ে
হেঁটে চলে অন্ধকার গলি ধরে,
পথ হারিয়ে উদ্ভ্রান্ত পথিকের মতো
ঘুমের ঘোরে এখনও শুনতে পায় এ তল্লাটে
যৌবন হারানোর বেদনায় অষ্টাদশী কিশোরীর গোঙানি।

২৩ ডিসেম্বর ২০০৬
কুয়েত সিটি, কুয়েত

জীবন পানসি

জলরঙে তুলির আঁচড় পড়ে এঁকে বেঁকে
ভাবনার সোনালী সুতোয় বাঁধা শিল্পী
নৈসর্গ প্রকৃতির নিবিড়তায় সুন্দর বোঝা পড়া;
একাকী নির্জনে আঁকে নিজের মতো
নদী তীরে কাদামাটি, ফসলের মাঠ
আর সবুজাভ গ্রামের
এক একটি রোমান্টিক ছবি..
যেখানে প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে শাড়ী পরিহিতা
এক আটপৌরে নারী,
দিবানিশি পল্লী কৃষকের জীবন সংগ্রাম।
শিল্পীর ভূদৃশ্যে ফুটে ওঠে শ্যামলের ছবি
নির্জন পথের কোলে কুঁকড়ে ঘুমিয়ে থাকা টোকাই
ডানপিঠেদের এক্কা দোক্কা, লাট্টু কিংবা ডাংগুলি খেলা
তুলির ক্যানভাসে তরুণী বধুর সুনীল মুখচ্ছবি।
নিলাজ কোলাজে শৈল্পিক মন পথের বাঁকে বাঁকে
এ যেন রূপ লাবন্যে সফল
স্বকীয়তার প্রাণবন্ত জীবন পানসি।

০৮/০১/২০০৭ ইং

নিঃশব্দ সঙ্গীত

ইদানিং আমার স্বপ্নের অবস্থান
চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকা; পুরানা পল্টন জুড়ে
স্বপ্নময় আশা, কবিতার ভাষা-
আগোছালো সংলাপ সবই অপেক্ষামান
রংধনু রঙে আকাশ দেখার মতো
সময় ছুটে চলে জ্যাব্রাক্রসিং পার হয়ে
দুঃচিন্তার গর্ভপাতে সাহসের দীর্ঘ বাঁক;
নগরীর কোলাহলে ভাঙে ঘোর-
পুড়ে জীবন আধুনিকতার শ্লোগানে।
শব্দহীন সঙ্গীত আন্দোলিত অস্থিমজ্জায়
বধির সমাজে তবুও চিরায়ত শব্দে
ঝংকার তুলে ধ্বনি নিরবধি।

মৈথুন শিল্প

মৈথুন অবগাহনে ঝড়ের বেগে
ছুটে নদীর সীমানা পেরিয়ে
মুখে নিঃসৃরিত লালাগুলো অমৃত স্বাদে
শরীরে তুলে মাদকতা
ভরা জোয়ারে কোমর বেঁধে সাঁতরিয়ে
কূলে ওঠতে দীর্ঘ সময়;
যদিওবা বন্ধ চিলেকোটার কপাট,
তবে খুলে যায় মনের অলিন্দে কামুক বাসনা
নতুন আঙ্গিকে নদী আলিঙ্গন
চাপা গোঙানিতে নগ্ন নৃত্য;
আধুনিকতার ছোঁয়ায় সঙ্গম
ইদানিং সেক্স সমাচার
পৌরানিক শব্দে প্রকৃতির চিয়ারত মৈথুন শিল্প।

২৮ জুন ২০০৮

বিকেলের স্নিগ্ধরোদ নীল দিগন্তে

বিকেলের স্নিগ্ধরোদ ঘাসের পালকে করে খেলা;
জীবন বাতাসের সুরে হাঁটে আলপথে
ভোরের স্বপ্ন উঁকি দেয় চিলেকোটার উঠোনে
প্রকৃতিপ্রেমী ভাবুক ফিরে সবুজ অরণ্যে
গভীর আশ্লেষে কানপাতা ভবিতব্য-
নিঃশব্দে ঢুকে পড়ে আশাবরী গলিতে
সুখ কোটরের ভাঁজে ভাঁজে জমে আত্মবিশ্বাস
মন্ত্রমুগ্ধের মতো ছুটে চলে
পশমের বুনুনিতে রঙিন পথ
পলল মৃত্তিকা মাড়িয়ে নীল দিগন্তে....।

২৭ জুন ২০০৮



মোঃ সেলিম রেজা
ইদানিং-৩

ইদানিং নীল রঙের পাখির আনাগোনায়
ফুরফুরে মেজাজে আঠারো বছরে টিনএজ;
ডুব সাঁতারে মগ্ন বডি ল্যাঙ্গুয়েজ
হালের মুঠোফোন নগর থেকে কুঁড়ে ঘরে।
ওরা ভাল থাকলেও ভাল নেই অনেকে
নির্বিকার লোক লজ্জা চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে
সারারাত কথা হয়, দেহকাম নিরবে
জলকেলী হরদম অবিরাম সুখ
প্রতিদিন সাঁতার বিলাস চোখে নেই ঘুম।

১ জুলাই ২০০৮


ইদানিং-৩

ইদানিং মানুষের ভিড় জমে
লেকের পাড়ে শান্ত জলের মিলন মেলায়
বিমুগ্ধ চোখে তাকিয়ে মুগ্ধ প্রেমিক;
শব্দহীন জলের স্রোতে ভাসে
সন্ধ্যার ওড়নায় নিঃসীম নির্জনতা.....
স্বপ্ন সন্ধানী দু'জোড়া চোখ তৃষ্ণার পেয়ালায়
দেয় মুখ; রাতের আরশিতে
ফেলে ভালোবাসার দিকচিহৃ....

৬ জুলাই ২০০৮


বিদায় হে কবিতার দিকপাল
(প্রয়াত কবিতার রাজপুত্র শামসুর রাহমান-কে নিবেদিত)


সময়ের আর্বতে বদলায় অনেক কিছু!
শুধু বদলাবেনা আদুরে কারুকাজ;
তুমিই তো কবিতার রাজপুত্র
ব্যাপ্তি প্রসারতার উজ্জ্বল নক্ষত্র।
সেদিনও ব্যস্ততার পাহাড় ভাঙ্গি
হঠাৎ ইথারে ভেসে এলো হু হু আর্তনাদ
নিভে গেলো কবির জীবন প্রদীপ
হারানো বেদনায় নিঃসীম শূন্যতা।
কবির মহাপ্রয়াণে অমানিশার কালো মেঘ
বাংলার আকাশ ভারী, অজস্র কান্নার রোল;
স্মৃতিগুলো মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে-
জীবনমুখী শব্দের গাঁথুনিতে
বুঝা যেত সহজে কবিতার সুখ দুঃখ।
নতজানু আমি ঋণী কাব্য সংসার
শোকাতুর অশ্র“ সিক্ত শেষ বিদায়-
হে কবিতার দিকপাল
তোমার প্রশ্নের জবাবে বলতে হয়;
নিখাঁদ ভালোবাসাই পারে
মানবকে নিয়ে যেতে মহিমার দিকে।

১৮ আগষ্ট ২০০৬



কবি পরিচিতি

মোঃ সেলিম রেজা, পিতা : মোহাম্মদ ইউনুছ, মাতা : মোছাম্মৎ জয়নাব খাতুন, জন্ম : ২ জানুয়ারী ১৯৮১ইংরেজী, জন্মস্থান : দক্ষিণ পতেঙ্গা, নাজির পাড়া, পতেঙ্গা চট্টগ্রাম-৪২২২।
প্রকাশিত গ্রন্থ : (ক) সপ্তর্ষী নক্ষত্রমালা-২০০৫ইং (কাব্যগ্রন্থ) (খ) বৈশাখ ১৪১৪- বাংলাদেশ দূতাবাস, কুয়েত (গ) উত্তরণ- বইমেলা ২০০৬ (যৌথ কবিতা সংকলন) (গ) কাল উত্তরণ- বইমেলা ২০০৭ (যৌথ কবিতা সংকলন)
যৌথ সম্পাদনা : (ক) উজান : ইতিহাস ঐতিহ্যের কাগজ-কুয়েত (খ) ‘দূর পরবাসে কবিতার আকাশে’- বইমেলা ২০০৮ (কাব্য সংকলন)
অর্জন : সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য সাহিত্য পুরস্কার প্রবাসী সাহিত্য পরিষদ, কুয়েত-একুশে সম্মাননা ২০০৬।
লেখালেখি : মূলত কবিতাই কবির মূল বিষয় অনুষঙ্গ। নিয়মিত স্থানীয় ও জাতীয় পত্র-পত্রিকায় ও সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে-হচ্ছে। এছাড়াও সাহিত্য সংস্কৃতি সমৃদ্ধ বিভিন্ন ওয়েব সাইটসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কবিতা সংকলনে কবিতা প্রকাশিত হচ্ছে।
বর্তমানে সাপ্তাহিক প্রতিচিত্র’র মধ্যপ্রাচ্য ব্যুরো প্রধান-কুয়েত ও মাসিক একুশে পত্রিকা কুয়েত প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বর্তমান অবস্থান : কুয়েত প্রবাসী। প্রজেক্ট ম্যানেজার, কুয়েত ইউনিভার্সিটি, সুয়েখ।

1 টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

ধন্যবাদ প্রিয় কবি মোঃ সেলিম রেজা

morou kobita